অণু গল্প- মুক্তি

মুক্তি
– জয়তী মিত্র

আমার ভুল শুধরে নেবার একটা সুযোগ আমাকে দাও তিথি আর এই জীবনে তোমাকে আমার থেকে আলাদা করবো না, কথা দিলাম। আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি আমার অন্যায়ের জন্য খুব লজ্জিত, তৃষার মোহে অন্ধ হয়ে আমি আমার নিজের চরম সর্বনাশ করেছি আর এমন হবে না, কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়লো রাহুল।
রাহুল আর তিথির এক বিয়ে বাড়ীতে আলাপ। তিথির বান্ধবী মিলির মাসতুতো দাদা রাহুল। মিলি সুন্দরী, শিক্ষিতা, স্মার্ট। অপরদিকে রাহুলও সুদর্শন, জিম করা পেটানো শরীর। প্রথম দেখাতেই দুজন দুজনের প্রেমে পড়ে। তারপর ফোন নম্বর আদান, প্রদান হবার পর বছর খানেক চুটিয়ে প্রেম পর্ব চলে দুজনের। তারপর দুই বাড়ির উপস্থিতিতে দুজন সাত পাকে বাঁধা পড়ে।
রাহুল একটি বেসরকারি কোম্পানিতে উচ্চপদে চাকরী করতো, তিথি স্কুল শিক্ষিকা, দুজনের বিয়েতে কোনো বাড়ি থেকেই আপত্তি ছিল না।
বিয়ের পর বেশ সুখেই চলছিল তাদের জীবনযাত্রা। বিদেশে গিয়ে দুজনে হানিমুনও সেরে এসেছে। দুজন, দুজনকে একবারে চোখে হারাতো।
এই সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি তিথির কপালে। বিয়ের বছর দুয়েকের মধ্যেই রাহুলের জীবনে প্রবেশ করে তৃষা। তৃষা রাহুলের কলিগ। আধুনিকা, সুন্দরী। ভীষণ গায়ে পড়া মেয়ে। সারাক্ষণ রাহুলের গায়ে এটুলির মত লেগে থাকতো। তার রূপে ক্রমশ হারিয়ে যেতে থাকে রাহুল।
ক্রমশ তিথির সাথে রাহুলের দূরত্ব বাড়তে থাকে। প্রায় দিন রাহুল দেরি করে বাড়ি ফেরে। তিথি জিজ্ঞাসা করলে দায় সারা উত্তর দেয়। তিথিকে আর আগের মত ভালবাসে না। তিথির সন্দেহ ক্রমশ বাড়তে থাকে। একদিন সকালে রাহুলের ফোনে মেসেজ এলো, ডার্লিং আজ তাহলে আমরা দুদিনের জন্য বেড়াতে যাচ্ছি বলো, আমার গোছগাছ সব হয়ে গেছে, আমি রেডি, তাহলে তুমিও রেডি হয়ে চলে এসো, অফিসে দেখা হচ্ছে।
রাহুল তখন স্নান করতে গিয়েছিল। মেসেজটা দেখে তিথি চুপ করে রইলো, কোনো কথা জিজ্ঞাসা করলো না। রাহুল অফিস যাবার সময় বলে গেল দুদিন অফিসের কাজে বাইরে যাচ্ছে। শুনে তিথির মাথায় আগুন জ্বলে উঠল। রাহুল চলে যাবার পর কিছু জিনিস নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গেল।
রাহুল ফিরে এসে তিথিকে নিতে এলো। তিথি আর রাহুলের কাছে ফিরে যেতে চাইলো না। তিথি যে সব জেনে গিয়ে ছিল সেটা রাহুল ঘুণাক্ষরেও টের পায় নি। তিথি মেসেজের সব কথা রাহুলকে জানিয়ে বললো, একজন প্রতারকের সাথে জীবন কাটানোর চাইতে একা থাকা অনেক ভালো। তোমার সাথে আর এক মুহূর্তও আমি থাকতে চাই না। আমি খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে ডিভোর্সের নোটিশ পাঠিয়ে দেব। আজ এই মুহূর্ত থেকে আমি তোমাকে মুক্তি দিলাম। এখন এসো, আমার কিছু কাজ আছে, বলে মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিল তিথি। দু’চোখে তিথির শ্রাবণের ধারা নামতে লাগল, বুকের ভিতরে একটা চাপা কষ্ট তিথিকে দুমড়ে, -মুচড়ে দিতে লাগল। রাহুলকে যে তিথি ভীষণ ভালোবাসে।

Loading

Leave A Comment